স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য লেখাটি পড়লে একজন নারী কখনই তার স্বামীর কাছে অপ্রিয় হবেনা। এমনকি তার স্বামী অন্য কোন নারীর প্রেমে পড়বেনা, বা পরকিয়ার মতো অন্যায় করার ইচ্ছাও জাগবেনা। আসুন স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য কি জেনে নিই।
স্বামীর সহিত স্ত্রীর ও স্ত্রীর সহিত স্বামীর প্রথম সাক্ষাতেই উভয়ের প্রাণে বৈদ্যুতিক প্রবাহের মত এক প্রকার পুলক প্রবাহ ও আকর্ষণ আসিয়া যায় । তখন হইতেই তাহাদের উভয়ের অন্তঃকরণে পরস্পর মিলনের মধুর চিন্তার উদ্রেক হয় । ভবিষ্যতের সেই রঙ্গীণ স্বপ্নই স্ত্রীকে তাহার পিতা-মাতা, ভ্রাতা-ভগ্নী আত্মীয়-স্বজন প্রভৃতির কথা ভুলাইয়া দেয় এবং পরস্পরকে নিবিড়ভাবে ভালবাসিতে আরম্ভ করে। ফলতঃ ইহাই দাম্পত্য জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য এবং আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাও তাহাই ।
প্রত্যেক স্ত্রী তাহার স্বামীকে একান্ত কামনার বস্তু বলিয়া মনে করে, ইহাই স্বাভাবিক । সর্বদা স্মরণ রাখিতে হইবে যে, স্বামী তাহার ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনেরই সাথী। কাজেই দুনিয়ার জীবনে সে তাহার স্বামীকে সন্তুষ্ট করিতে ও আনন্দ দান করিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করিবে ফলতঃ প্রত্যেক পতিপ্রাণা সতী-সাধ্বী স্ত্রী স্বামীর খেদমত করাকে তাহার জীবনের প্রধান কর্তব্য বলিয়া মনে করিয়া থাকে এবং ইসলামী শরীয়তের বিধান ইহাই ৷
এই বিষয়ে হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলিয়াছেন, যে স্ত্রীলোকের প্রতি তাহার স্বামী অসন্তুষ্ট, আল্লাহ তায়ালাও তাহার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। আর যে স্ত্রীর প্রতি তাহার স্বামী সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তায়ালাও তাহার প্রতি সন্তুষ্ট হন। আর একটি হাদীসে আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলিয়াছেন, কোন মানুষের পক্ষে যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাহাকে সিজদা করা নিষিদ্ধ না হইত, তবে আমি প্রত্যেক স্ত্রীলোককে আদেশ করিতাম যে, তাহারা যেন আপনাপন স্বামীকে সিজদা করে। হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উক্ত হাদীসটি হইতেই স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্যের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
এতদসম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলিয়াছেন, পুরুষগণ স্ত্রীলোকদের উপরে এইজন্যই ক্ষমতাবান যে, আল্লাহ তায়ালা তাহাদের উভয়ের মধ্যে একের উপরে অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন, আর এইজন্য তাহারা ক্ষমতাবান যেহেতু নিজেদের ধন-সম্পদ নারীদের জন্য ব্যয় করিয়া থাকে।
উল্লেখিত আয়াতের মর্ম এই যে, পুরুষের উপার্জিত টাকার দ্বারাই স্ত্রীর দেন-মোহর প্রদান করিতে হয়, আর তাহার ভরণ-পোষণের যাবতীয় ব্যয়ভারও স্বামীকেই বহন করিতে হয়। এইজন্যই আল্লাহ তায়ালা স্বামীকে স্ত্রীর উপরে প্রাধান্য প্রদান করিয়াছেন। আল্লাহ তায়ালা আরও বলিয়াছেন, নারীগণ যেন স্বামীর প্রতি অনুরক্ত থাকে এবং আপন গুপ্তাঙ্গের হেফাজত করে। অর্থাৎ তাহারা স্বীয় গুপ্তাঙ্গকে অন্যের দৃষ্টি ও ব্যবহার হইতে স্বামীর জন্য হেফাজত করিবে ।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর হক কি
একদা জনৈকা স্ত্রীলোক হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সঃ)! আমার প্রতি আমার স্বামীর কি পরিমাণ হক বা দাবী আছে ? তদুত্তরে তিনি ১৪ টি হকের কথা বললেন-
(১) স্বামীর বিনা অনুমতিতে কোন স্ত্রীলোক কোথাও গেলে সে ফিরিয়া না আসা পর্যন্ত তাহার উপর ফেরেশতাগণ লানত বা অভিসম্পাত বর্ষণ করিতে থাকে
(২) স্বামীর অনুমতি না লইয়া কোন স্ত্রীলোকের পক্ষে নফল রোজা রাখা নিষিদ্ধ।
(৩) স্বামী যদি স্ত্রীকে সঙ্গে লইয়া উটের পিঠে আহোরণ করিয়া পথ চলিতে থাকে, আর সেই অবস্থায় যদি স্বামী তাহার সহিত সঙ্গম করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তাহাতেও স্ত্রীর আপত্তি করা চলিবে না।
(৪) যদি কোন স্ত্রীলোক আসমান ও জমিনের সকল অধিবাসী সমতুল্য নেকী অর্জন করিয়া থাকে, অথচ স্বামীকে কোন প্রকারে কষ্ট দেয়, তবে আল্লাহ তায়ালা তাহাকে হাত-পা বাঁধিয়া ও চেহারা বিকৃত করিয়া দোযখে নিক্ষেপ করিতে আদেশ প্রদান করিবেন।
(৫) কোন স্ত্রীলোকের যদি হযরত সোলায়মান (আঃ)-এর সমতুল্য সম্পদ থাকে এবং সে যদি সবই তার স্বামীর চরণে উৎসর্গ করিয়া দেওয়ার পরে কোন দিন খোটা দিয়া বলে যে, আমার এত ধন-দৌলত ছিল, তাহা সবই তুমি গ্রাস করিয়াছ, তবে তাহার সেই দানের কোনই বিনিময় পাইবে না।
(৬) কোন স্ত্রীলোক যদি স্বামীর বিনা অনুমতিতে এক রাতের জন্য অন্যত্র বাস করে এবং তজ্জন্য স্বামী তাহার প্রতি অসন্তুষ্ট হয় ও ক্ষমা না করে, তবে যতই ইবাদত বন্দেগী করিয়া থাকুক না কেন সে দোষখে যাইবে।
(৭) যে স্ত্রীলোক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করে, রমজানের রোজা পালন করে ও স্বামীর খিদমত করে, সে যে কোন দরওয়াজা দিয়া ইচ্ছা, বেহেশতে যাইবে।
(৮) কোন স্ত্রীলোকের স্বামী যদি তাহাকে সঙ্গমের জন্য শয্যায় আহবান করে আর স্ত্রী যদি স্বামীর আহবান অগ্রাহ্য করিয়া পৃথক শয্যায় শয়ন করিয়া রাত্রি যাপন করে, তবে যে পর্যন্ত তাহার স্বামী তাহাকে ক্ষমা না করিবে সে পর্যন্ত তাহার কোন ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হইবে না।
(৯) কোন স্ত্রী যদি তাহার স্বামীকে এইরূপ কথা বলে যাহাতে স্বামী অসন্তুষ্ট হয়, স্বামী যদি সেজন্য তাহাকে ক্ষমা না করে তবে মুনাফিক ও মুশরিকদের নামের তালিকায় সেই স্ত্রীলোকের নাম লিখিত হইবে
(১০) যে স্ত্রীলোক তাহার স্বামীর আত্মীয়-স্বজন ও মেহমানদের সাদর না করিবে, আসমানের ফেরেশতা মণ্ডলী তাহার প্রতি লানত বর্ষণ করে।
(১১) যে স্ত্রীলোকের প্রতি তাহার স্বামী অসন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তায়ালাও তাহার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন। আর যাহার প্রতি তাহার স্বামী সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তায়ালাও তাহার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন।
(১২) যে স্ত্রীলোক স্বামীর সংসারে কোন সম্পদ বিনষ্ট করে বা চুরি করে, তাহার প্রতি আসমানের সত্তর হাজার ফেরেশতা অভিসম্পাত বর্ষণ করে।
(১৩) আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন স্ত্রীলোকদিগকে নামাজ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিবার পরেই স্বামীর প্রতি কর্তব্য পালন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিবেন। যদি কোন স্ত্রীলোক স্বামীর প্রতি তাহার কর্তব্য পালন না করিয়া থাকে, তবে সে রীতিমত ইবাদত-বন্দেগী করা সত্ত্বেও দোজখবাসিনী হইবে ।
(১৪) একদা হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলিলেন, আমি বেশীর ভাগ স্ত্রীলোককেই দোজখবাসিনী দেখিয়াছি। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সঃ)! ইহার কারণ কি ? তিনি উত্তর করিলেন, অধিকাংশ স্ত্রীই স্বামীর প্রতি তাহাদের কর্তব্য পালন করে না এবং অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করিয়া থাকে।
হযরত ফাতেমা জোহরা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর উপদেশ
হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁহার কন্যা হযরত ফাতেমা জোহরা (রাঃ)-কে স্বামীগৃহে রওয়ানা করিয়া দেওয়ার কালে নিম্নলিখিত উপদেশগুলি প্রদান করিয়াছিলেন। যথা :
(১) “বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলিয়া প্রথমে স্বামীর গৃহে প্রবেশ করিবে।
(২) সর্বদা পাক পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকিবে।
(৩) প্রত্যহ নিয়মিতভাবে চোখে সুরমা ব্যবহার করিবে।
(৪) প্রত্যহ মাথা ও শরীরে তেল মাখাইয়া গোসল করিবে ।
(৫) স্বামীর সঙ্গে সর্বদা সরল প্রাণে ও হাসি মুখে কথা বলিবে। স্বামী যখন তোমাকে কোন কথা বলিবে, তখন বিশেষ মনোযোগের সহিত তাহা শুনিবে এবং তদানুযায়ী কাজ করিবে । (৬) স্বামীকে প্রাণের সহিত ভালবাসিবে ও দাসীর মত তাহার খিদমত করিবে।
(৭) সর্বদা সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করিবে ও ঘরে লোবান জ্বালাইবে ।
(৮) তিক্ত ও অম্ল দ্রব্য বেশী খাইবে না ।
(৯) আল্লাহ যখন যে অবস্থায় রাখেন, সেই অবস্থাই সন্তুষ্ট থাকিবে আল্লাহর শোকর করিবে।
(১০) শ্বশুরকে নিজের পিতার মত ও শাশুড়ীকে নিজের মাতার মত ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সেবা-যত্ন করিবে।
আপনি মযদি একজন নারী হন, তাহলে আপনি চাইলে সবচেয়ে আদর্শ নারী বা চাইলে সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারীতে রুপান্তর হতে পারবেন। আপনি চাইলে আপনার ভালবাসায় নিজ স্বামীকে আবদ্ধ রাখতে পারবেন, আবার চাইলে বাড়ির কাজের লোকের মতোও রাখতে পারবেন। কোনটাতে আপনার সম্মান বাড়বে, তা অনুসন্ধান করা আপনারই কাজ। ভাল থাকুন সংসারে সুখি হয়ে থাকুন- আল্লাহ হাফেজ
আরো পড়ুন- ওজুর ফরজ সুন্নাত ও মুস্তাহাবসমূহ