দরূদ শরীফের ফজিলত ও আশ্চর্য কিছু ঘটনা আজকে আপনাদেরকে জানাবো, যা শুনলে আজ থেকে সু্যুগ পেলেই দরূদ শরীফ পড়তেই থাকবেন। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি জগতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা ও দয়ালু। জ্বীন-ইনসানসহ সকল মাখলুকাত একমাত্র তাঁর উছিলায় সৃষ্টি হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি না করলে অন্য কোন মাখলুক সৃষ্টি করা হত না।
কোরআন পাকের ঘোষণা অনুযায়ী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রহমত স্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছে। আমাদের প্রতি তাঁর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও এহসান রয়েছে। এ অনুগ্রহের প্রতিদান পূর্ণভাবে আদায় করা কোন উম্মতের পক্ষে সম্ভব নয় । এ দুর্বল কমজোর অপারগ বান্দা যাতে তাঁর সর্বশ্রেষ্ট দোস্ত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গুণগান করতে পারে সেজন্যই স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা মু’মিনদের শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে কোরআন পাকে বিভিন্ন দুরুদ শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন।
একদা নীলনদ দিয়ে এক সওদাগরের একটি জাহাজ যাচ্ছিল। ঐ জাহাজে দৈনিক দরূদ শরীফ পাঠকারী একজন লোক ছিল। অভ্যাস অনুযায়ী একদিন দরূদ শরীফ পাঠকালে দেখতে পেল, একটি মাছ জাহাজের কিনারায় আসল । যতক্ষণ পর্যন্ত সে দরূদ শরীফ পড়ছিল, ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ মাছটি তা শুনছিল। হঠাৎ এক জেলে এসে জাল মারল, ফলে মাছটি আটকা পড়ল।
পরিশেষে মাছটি ধরে বিক্রয় করার জন্য বাজারে নিয়ে গেল। হযরত ওমর (রাঃ) বা হযরত আবু বকর (রাঃ) এ খেয়ালে বাজারে আসছিলেন যে, একটি বড় মাছ ক্রয় করবেন এবং নবী করমি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাওয়াত করবেন। তিনি বাজার হতে ঐ মাছটি ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে এলেন এবং তাঁর স্ত্রীকে ভাল করে মাছটি ভূনা করার জন্য বললেন। বিবি সাহেবা মাছটি রান্না করার জন্য সব রকমের চেষ্টা করলেন, কিন্তু রান্না তো দূরের কথা মাছটি কড়াইয়ে চাপিয়ে আগুন জ্বালাতে পারলেন না। আগুন নিজে নিজেই নিভে যায়।
পরিশেষে তারা উভয়েই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডেকে আনলেন এবং সমন্ত ঘটনা খুলে বললেন। তিনি মাছটির সমস্ত ঘটনা পরিজ্ঞাত হয়ে বললেন, দুনিয়ার অগ্নি কেন দোযখের অগ্নিও তাকে জ্বালাতে পারবে না। কেননা এক সময় একজন ভক্ত অত্যন্ত ভক্তির সাথে দরূদ শরীফ পাঠ করছিল, আর এ মাছটিও অনুরূপভাবে প্রেমের সাথে তা শ্রবন করছিল । এ অবস্থায় সে জালে ধরা পড়েছে। সুতরাং দুনিয়ার আগুন কেন দোযখের আগুনও তার জন্য হারাম হয়ে গেল। দরূদ শরীফ পাঠ এবং শ্রবন করা এতই ফযীলত যে জ্ঞান বুদ্ধিহীন একটি মাছ শুধু দরূদ শরীফ শোনর জন্য এতখানি মর্যাদা পেল । অথচ আশরাফুল মাখলুকাত মুসলমান হওয়া সত্বেও কেন এমন মর্যাদা পাবে না। নিশ্চয়ই পাবে।
খায়রুর মোয়ানেছ কিতাবে বর্ণিত আছে,একদিন আবু জাহেল ও তার সঙ্গী সাথীরা কোনও এক স্থানে বসেছিল। এমন সময় এক ভিক্ষুক এসে তাদের নিকট ভিক্ষা চাইল । ঐ লোকেরা ঠাট্টা করে তাকে বলতে লাগল, তুমি অন্দরমহলে চলে যাও, সেখানে হযরত আলী (রাঃ) বসে আছেন তোমাকে অসংখ্য ধন-সম্পদ দান করবেন। কেননা তিনি খুব দাতা।
ভিক্ষুক কাফেরদের কথা অনুযায়ী অন্দরমহলে যেয়ে তাঁর নিকট ভিক্ষা চাইল। ঐ সময় তাঁর নিকট এমন কোন বস্তু ছিল না, যা তাকে দিতে পারেন। তিনি ভিক্ষুকের উভয় হাতের ওপর ফুঁক দিয়ে বললেন, তুমি তোমার হাত দুখানা মুষ্ঠিবদ্ধ কর। আর হাত দুখানা কাফেরদের নিকট যেয়ে খুলবে। যখন সে কাফেরদের নিকট যেয়ে হাত দুখানা খুলল, তখন কাফেররা তার হাতের মধ্যে একটি মানিক দেখতে পেল। যার মূল্য এক হাজার দীনার ছিল।
কফেরগণ তার নিকট যেয়ে জিজ্ঞেস করল, বীনা পরিশ্রমে আপনার নিকট এ মানিক কোথা থেকে আসল ? হযরত আলী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, যখন আমার নিকট ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইল, তখন আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম, কেমন করে আমি তাকে খালি হতে ফিরিয়ে দেব, অথচ এমন কোন বস্তু আমার নিকট ছিল না, যা আমি ভিক্ষককে দিতে পারি । সুতরাং আমি ভিক্ষকের হাতের ওপর দরূদ শরীফ পাঠ করে ফুঁক দিয়ে দিলাম।
এ দরূদ পাঠের বিনিময়ে আল্লাহ পাক তার হতে মানিক সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এ কথা শুনে কাফেরগণ অত্যন্ত আশচর্য হয়ে গেল । এমন কি তিন জন কাফের তখনি মুসলমান হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ ! দরূদ শরীফের ফজিলত বর্ননা করে কখনই শেষ করা যাবেনা। তাই যখনই সুযোগ পাবেন তখনই দরূদ শরীফ পড়তে থাকবেন।